সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা ও যশোরের কেশবপুর উপজেলার ত্রিমহিনী বাজার বিভক্তকারী কপোতাক্ষ নদের ওপর সংযোগ সেতু না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন দুটি উপজেলার প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৭৫ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোতেই পারাপার হতে হচ্ছে তাদের। বলতে গেলে এই একটিমাত্র সাঁকোই গ্রামগুলোর ৫০হাজার মানুষের ভরসা।
স্থানীয়রা জানান, কলারোয়া ও কেশবপুর উপজেলার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে যোগাযোগের মাধ্যম ও বাণিজ্যিক সুবিধা থাকায় দুই উপজেলার প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ এই বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করেন। কিছুদিন পর পর স্থানীয়রা সাঁকোটি সংস্কার করলেও সপ্তাহ না যেতেই পুনরায় নড়বড়ে হয়ে পড়ছে সাঁকোটি। প্রতিদিন এই সাঁকোটি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাশিয়াডাঙ্গার দুটি ও ত্রিমহিনীর পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতায়াত করেন।
মূলত, কাশিয়াডাঙ্গা-ত্রিমহিনী বাঁশের সাঁকো দিয়ে কলারোয়া উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা, মাঠপাড়া, ছলিমপুর, পাকুড়িয়া, দলুইপুর, বড় খলসী, ছোট খলসী, বামনখালী, গড়ান বাজার, ক্ষেত্রপাড়া ও ওফাপুর এবং কেশবপুর উপজেলার চাদড়া, বেলতলা, হাজরাকাটি, খাজুরা, হাকিমপুর, পাজাখোল, রাজগঞ্জ, বরনডালি, ঘোপসানা, জাহানপুর, নিমতলা, ভোগতিসহ প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করছেন ঝুকি নিয়ে।
কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের লিয়াকত আলী জানান, স্থানীয় মানুষের চলাচলের জন্য ২০০১ সালে তিনিসহ ২০-২২ জন যুবক মিলে কপোতাক্ষ নদের ওপর কাশিয়াডাঙ্গা-ত্রিমহিনী বাজারে ২৭৫ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করেন। সে সময় সাঁকো তৈরিতে তাদের ৪ লাখ টাকা খরচ হয়। সাঁকোটি তৈরির পর কয়েকবার সংস্কার করা হয়। বর্তমানে সংস্কার করলেও সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তার পরও দুই উপজেলার প্রায় ৫০হাজার মানুষের চলাচলের জন্য নিজেরা সংস্কার কাজ করছি।
তিনি আরো বলেন, এ সাঁকো ব্যবহার করে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলসহ ছোট যান চলাচল করায় ঘটছে দুর্ঘটনা। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি করলেও এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, সেতু না থাকায় আমাদের (সাতক্ষীরা জেলার অধিবাসী) বেশি দুর্ভোগ হচ্ছে। কারণ কলারোয়া বাজার থেকে কেশবপুরের দূরত্ব কম হওয়ায় উৎপাদিত ফসল কেশবপুর মোকামে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু বাঁশের সাঁকো দিয়ে ভ্যান চলাচল করতে না পারায় এসব মালামাল নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে সাঁকো পার হতে হয়।
কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহবুবর রহমান মফে জানান, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কপোতাক্ষ নদের ওপর (কাশিয়াডাঙ্গা-ত্রিমোহিনী) পাকা সেতু নির্মাণের।
তিনি আরো বলেন, কপোতাক্ষ নদের ওপর সংযোগ সেতু নির্মাণ হলে কলারোয়া উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতির উন্নয়ন হবে।কেশবপুর উপজেলার ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম আনিছুর রহমান বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৭৫ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোতেই পারাপার হতে হচ্ছে জনসাধারণের। বলতে গেলে এই একটিমাত্র সাঁকোই গ্রাম গুলোর ৫০হাজার মানুষের ভরসা।
কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, কাশিয়াডাঙ্গা ও কেশবপুর উপজেলার ত্রিমোহিনী বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের ওপর পাকা সংযোগ সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। উপজেলার উন্নয়ন ও জনদুর্ভোগ দূর করতে এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা করা হয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।